চকচকে সবুজ পাতা
লেখকঃ সাঈদা নাঈম
ভোরের স্নাত আলোয় বিষাক্ত শীষা। অক্সিজেনের সাথে দেহের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ছে। কি করার আছে? বেঁচে থাকতে হলে অক্সিজেন নিতেই হবে। তাহলে মিথিলা কি সিদ্ধান্ত নিবে? বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাকে মেরে ফেলবে? বেঁচে থাকার অবলম্বনই যদি না থাকে, তাহলে বেঁচে থেকে লাভ কি?
ভোরের আলোয় কোনোমতে কাটিয়ে দেয়। আলসে দুপুরটা যখন আসে, নিয়ে আসে অনেক কু বার্তা। আজ হঠাৎ অসময়ে একটা কোকিলও ডেকে উঠলো। ভিতরটা আরো কেঁপে ওঠে মিথিলার। ভালোবাসার একমাত্র মানুষটি তার সাথে মিথ্যে বলেছে। এই মিথ্যে ঢাকতে আরেকটি মিথ্যে বলেছে। কি বলবে ও এটাকে?
ওর ভালোবাসার মানুষ রীফাত, ওর সাথে প্রতারনা করছে! জীবনের সব ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে বেঁচে আছে মিথিলা শুধুমাত্র রীফাতের জন্য। একদিন রাতে সুযোগ পেয়ে দুজনেই গিয়েছিল ছাদে। চকচকে রূপালী চাঁদকে সাক্ষী রেখে দুজন দুজনকে কথা দিয়েছিল। সেই কথা কি শুধু কথার কথা ছিল? আজ যে কথা মিথিলা শুনেছে, সে কথার জন্য কি ও প্রস্তুত ছিল?
ভাবনাতেও আনেনি এসব কথা। মিথিলাতো ওর সাথে কোনো প্রতারনা করেনি। নিঃস্বার্থ ভাবে ওর জন্য সবকিছু সহ্য করেছে। শুনেছে ওর সব কথা। গুছিয়েছে সংসার সুন্দর করে। তবে কেন এই প্রতারনা?
আসলেই এটাকে কি বলে? রীফাতকে খোঁজ করতে সামান্তা এসেছিল। এটাতে কোনো সমস্যা নেই। খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। মিথিলা স্বামীর বন্ধুকে আন্তরিকতার সাথে বসে গল্প করলো। নাস্তা করলো একসাথে। ঘটনাটি ঘটলো দুপুরের খাবারের সময়। সামান্তা প্যারিস থেকে সরাসরি এখানে এসেছে। ও বাংলাদেশী না, ও ভারতের। টুকটাক ভালো বাংলা জানে। ঘটনাটার শুরু অনেক আগেই ছিল। তবে মিথিলা জানলো দুপুরে খাওয়ার সময়। রীফাত একটা কনফারেন্স এটেন্ড করতে চট্রগ্রাম গিয়েছে। ওকে ফোন করেনি। আর সামান্তা নম্বর জানে না। খাবার টেবিলে বসে মিথিলা গল্পের মাঝে জানতে চাইলো, সামান্তা, তোমরা খুব ভালো বন্ধু ছিলে তাই না? এতোদূর চলে এলে বন্ধুর জন্য। একেই বলে বন্ধুত্ব।
ভাঙ্গা ভাঙ্গা বাংলায় সামান্তা বলে, ইয়েস, কুব বালো বন্ধু ছিলাম। বাট এর চেয়ে আমাদের রিলেশন ছিল সো মাচ বেটার। ইউ নো! উইকেন্ডে ও কিচেন সামলাতো। মিথিলা জানতে চাইলো, তোমরা কি একই বাড়িতে থাকতে! ইয়েস, আমরা এক সাথে থাকতাম। ইউ নো, হোয়াট আই মিন? মিথিলা বোকার মতো বলল, না।
সামান্তা বলল, আমরা তো বিয়ে করেছিলাম। একসঙ্গে থাকবো না? আচ্ছা, তুমি রীফাতের কাজিন? তোমাকে জানায়নি? জানানোর কিছু নেই। কারণ আমাদের রিলেশনটা টিকেনি। এখানে এসেছিলাম জাস্ট একবার দেখা করার জন্য। ওখানকার ডক্টররা কি যে বলল! বলে কি আই হ্যাভ নো টাইম এনি মোর, কি বলছো? এর জন্য রীফাত তোমাকে ছেড়ে চলে এসেছে।
ও নো ডিয়ার। আমাদের আন্ডারস্ট্যান্ডিং হচ্ছিল না। সো কুইক ডিসিশন নিয়েছি। হঠাৎ বলে, রীফাত কখন আসবে? মিথিলা জানালো দুইদিন পর। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সামান্তা বলে, দেখা হলেই ভালো। খুব মিস করছি। আচ্ছা এখানে আর কে কে থাকে?
আর কেউ না। আমি আর রীফাত।
তোমরা দুজন!
হ্যাঁ, আমি ওর কাজিন না, ওর ওয়াইফ। তোমার কথা শুনে খারাপ লাগছে। একটা সম্পর্ক।বা বন্ধকে সময় দিতে হয় টিকিয়ে রাখার জন্য। তোমরা দাওনি।
মে বি।
মে বি, না। এটিই ঠিক। কিন্ত আমি অবাক হচ্ছি। রীফাত আমাকে এগুলো গোপন করলো কেন?
তোমাকে কিছুই বলেনি!
না। কিছু না। তাছাড়া আমি তো কোনো প্রশ্ন করিনি এসব নিয়ে। আমরা পছন্দ করে বিয়ে করেছি।
আমি এসে তো তাহলে প্রবলেম করলাম।
না, তা না। আমাকে বিশ্বাস করে রীফাত বলতে পারতো। তুমি এখানেই থাকো। আমার সমস্যা নেই। ও ফোন করলে তোমার কথা বলবো।
সামান্তা বলল, না প্লিজ বলো না। হঠাৎ এসে দেখুক। আমি তোমাদেরও কোনো অসুবিধা করবো না। আমি তো চলে যাবো অন্য পৃথিবীতে। তুমি খুব ভালো। এতোক্ষণে কথা বলছি, তোমার নাম জানা হয়নি। মিথিলা নিজের নাম বলে সামান্তাকে গেস্টরুম দেখাতে নিয়ে গেল। মৃত্যুপথযাত্রী। ওর সাথে আর কি বলবে?
রীফাত লুকোচুরি করেছে। এ বিষয়টা মিথিলা সহজভাবে নিতে পারছে না। ওর ভালোবাসা কি নড়বড়ে ছিল? সত্যিটা রীফাত বললে কি আর হতো? কিছুদিন রাগ করে যা হবার তাই হতো। ভাগ্যে বিয়ে থাকলে হতো, না হয় হতো না। দুজন দুজনকে ভালোবাসতো। যদিও সামান্তাকেও ভালোবেসে বিয়ে করেছিল। এক মন অনেককেই ভালোবাসতে পারে।
না পারলে বহুবিবাহের প্রচলন থাকতো না। বিয়ে মানেই শুধু কামবাসনার জন্য নয়। একজন মানব মানবীর দুই আত্মা এক হওয়া প্রধান উপাদান ভালোবাসা। দৈহিক মিলন ভালোবাসা নয়। এটি কৌতুহল কিংবা অন্যকিছু।
দুইদিন সামান্তার ভালো খেয়াল রাখলো। মেয়েটা সত্যি অসুস্থ। অনেক মেডিসিন খেতে হয়। খাবার খেতে পারে না। এ সবকিছুতে মিথিলা একটুও বিরক্ত হচ্ছে না। ক্ষোভ হচ্ছে রীফাত একটি বিয়েকে গোপন করে ওর সাথে প্রতারণা করেছে এই ভেবে।
রীফাতের সঙ্গে শেষ দেখা করতে আসা সামান্তার শেষ পর্যন্ত দেখা করা হবে কিনা ও জানে না। শরীর খুব। বেশি অসুস্থ হয়ে গেছে একদিনেই। সময় ফুরিয়ে আসছে দুজন নারী একই বাসায় বসে টের পাচ্ছে। আর সাক্ষী থাকছে বারান্দায় ফুটে থাকা বেলি ফুল আর কিছু ইনডোর গাছ। বৃষ্টির ছোঁয়া পেয়ে সব গাছ ঝলমল করছে। চকচকে সবুজ পাতা যেন আনন্দ করছে। মিথিলা ভাবলো এমন একটা বৃষ্টি সামান্তার জন্য যদি আসতো?