Home গল্প জলসাঘর (পর্ব ০৪)

জলসাঘর (পর্ব ০৪)

জলসাঘর (পর্ব ০৪)

লেখকঃ সাঈদা নাঈম

প্রচণ্ড ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও পল্লবী বারান্দায় বসেই জোছনা ভরা রাতটি কাটিয়ে দিলো। মুকুন্দ কোনোমতেই এত রাতে এই পুরোনো বাড়ির ছাদে যেতে চাইলো না। কী আর করা? বারান্দায় বসে যতটুকু জোছনা দেখা যায় তাতেই পল্লবীর মন ভরে গেল। চারপাশটা একেবারে খোলা, তাই কোনো প্রতিবন্ধকতা হয়নি। গাড়ির হর্ণ নেই। নিরিবিলি রাত। আর রুপালি একটি চাঁদ। কত আকর্ষণ করার ক্ষমতা এই চাঁদের। ঝলসানো রূপ। মুগ্ধ হয়ে মানুষ তাকিয়ে থাকে এই চাঁদের দিকে। আর কল্পনায় খোঁজে তার প্রিয় মানুষটিকে। যার হাতে হাত রেখে, কখনো কাঁধে মাথা রেখে দেখবে চাঁদের রূপ। কেউ কি কখনো ভেবেছে কেন এই আকাঙ্খা? ভালোবাসার মানুষটিকে নিয়েই কেন জোছনা দেখতে হবে? এর কোনো উত্তর নেই। চাঁদের আলোর সাথে ভালোবাসার একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। রয়েছে অন্তরের যোগসূত্র। তাই চাঁদ চাঁদই।

প্রায় ভোরের দিকে মুকুন্দ ও পল্লবী ঘুমাতে গেল। পল্লবী রাতে ভেবেছিল ঐ ঘরটির কথা মুকুন্দকে বলবে। কিন্তু মনেই ছিল না। সকালে একটু দেরি হলো ঘুম ভাঙতে। ইতিমধ্যে মতির মা সকালের নাস্তা টেবিলে দুইবার গরম করে দিয়েছে। এ মহিলাটি কাজের বেলায় খুব নিষ্ঠ। কাজকে ভয় পায় না। পল্লবীর কোনো কাজই করতে হয় না। পল্লবী স্নান সেরে টেবিলে এসে বসতেই আবার গরম করে আনলো খাবার। এরমধ্যে মুকুন্দও এলো। একসাথে দু’জন নাস্তা খেয়ে চায়ের কাপ নিয়ে বাইরে এলো।

মুকুন্দ দেখলো বাগানে কেও একজন কাজ করছে খুব মনযোগ দিয়ে। পল্লবীকে ইশারায় প্রশ্ন করলো। পল্লবী বলল, “ও হো। তোমাকে বলাই হয়নি। ও হচ্ছে রমেশ। বাগানটা নতুন করে করার জন্য ওকে রেখেছি। বলেছি, ওভাবে ধরে বেতন দিতে পারবো না। তবে থাকা খাওয়া সব এখানে।”

মুকুন্দ চা শেষ করে বলল, “তা ঠিক আছে। কিন্তু চেনা জানা হলে ভালো হতো না?”

“চেনা তো। মতির মা এনে দিয়েছে। ওর পরিচিত।”

“তা করছে তোমার কাজ ঠিকমতো?”

“সবে তো এলো। দেখা যাক। রমেশ বলেছে ও গাছ লাগালেই সেই গাছে ফুল ফোটে। ওর

বেশ সুনাম আছে।”

“ভালো কথা।”

“কি ভাবছো।” – পল্লবী মুকুন্দকে প্রশ্ন করলো।

“না, তেমন কিছু না।”

“আমি জানি তুমি কি ভাবছো। আমাদের বাগানে এখনো কোনো ফুল ফুটলো না। তাইতো? আচ্ছা, মন খারাপ কেন করছো? যখন সময় হবে তখন ঠিক আমাদের বাগানে ফুল ফুটবে। সব ভগবানের ইচ্ছে। নাকি অন্যকিছু ভাবছো?”

“কি ভাববো আবার?”

পল্লবী কিছুটা দুষ্টুমির সুরে বলে, “ফুল ফোটাবার জন্য অন্য কাওকে আনবে কিনা …!”

“তোমার মুখে কিচ্ছু আটকায় না পল্লবী। আমাদের বাগানে ফুল ফুটুক আর না ফুটুক। তুমিই থাকবে সারাজীবন আমার বাগানে।”

পল্লবী প্রসঙ্গ ঘুরানোর জন্য বলল, “আজ বের হবে না?”

“এই তো এখন বের হবো। তুমি কোথাও যাবে?”

“না। রমেশের বাগানের কাজ করা দেখবো।”

মুকুন্দ চলে গেল। পল্লবী নিচতলার বারান্দায় বসে রমেশের কাজ করা দেখছিল। হঠাৎ একটা শব্দ ওর কানে গেল। এবং শব্দটা ঐ দক্ষিণের ঘর থেকে যে এলো এটি পল্লবী নিশ্চিত। ও উঠে ঐ দিকেই যাচ্ছিল, এমন সময় রমেশ পল্লবীকে দেখতে পেয়ে বলল, “বৌদি মনি, আপনার কি ফুল বেশি পছন্দ? মানে কোন গাছ বেশি লাগাবো?”

“রমেশ তোমার যে যে গাছ লাগাতে ইচ্ছে হয়, লাগাও। তবে বারোমাস যেন বাগানে ফুল ফোটে।”

“আচ্ছা।”

“তবে শোন, লাল জবা গাছ লাগাতে ভুলো না।”

“আচ্ছা বৌদি মনি।”

কথা শেষ করে পল্লবী ঐ ঘরটির সামনে গেল। ঘরটিতে তালা ঝোলানো। পুরোনো জঙ্গ ধরা বড় একটি তালা। ঘরটির সামনে পল্লবীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মতির মা দৌঁড়ে আসে।

“আম্মা আপনি এহানে কি করেন? একাএকা ঘুরবেন না।”

“কেন মতির মা? একা ঘুরলে ভূতে ধরবে?”

“কি সব অলুক্ষুণা কথা যে কন। পুরানা জমিদার বাড়ি, নানান লোকে নানান কথা কয়।

আপনি সাহসী দেইখ্যা এই বাড়িতে থাকতাছেন। অন্য কেও হইলে পারতো না।

পল্লবী হেসে বলে, “তাহলে তো তুমিও বেশ সাহসী মতির মা।”

“আর কথা বাড়ায়েন না। ভরদুপুরে এহানে না থাইক্যা ঘরে যান।”

“আচ্ছা মতির মা, এখানে নাকি আগে নাচ গান হতো।”

“কি যে কন! জমিদার বাড়িতে নাচ গানের ব্যবস্থা থাকবো না তা কেমনে হয়?”

“তাহলে তো এখানে জলসাঘর আছে, কোনটা?”

“এইডাই তো হেই ঘর।”

“আচ্ছা মতির মা, লীলারা কাল বলল এখানে নাকি কার আত্মা …!”

“বাদ দেন তো। চলেন ভিতরে যাই।”

মতির মা একা একাই বিড়বিড় করতে থাকলো, এতকাল কিছু শুনলাম না, এহন আইছে ভূত। ভূত না পেত্নী।

“মতির মা কি বলো?”

“কিছু না। আপনার কোথাও যাইতে হইলে আমারে ডাক দিবেন।”

“আচ্ছা বাবা দিবো। তুমি তো দেখছি ভয়ে শেষ।”

পল্লবী নিজের ঘরে গিয়ে একটি গল্পের বই নিয়ে বসলো। ইজি চেয়ারে হেলান দিয়ে বই পড়তে পড়তে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে। ঘুম ভাঙলো মতির মার ডাকে। কিন্তু চোখ খুলে পল্লবী এ কাকে দেখছে! এ তো মতির মা নয়! তবে …..

 

সকল পর্বের লিংক নিম্ন দেওয়া হয়েছে
====================

জলসাঘর (পর্ব ০১)

জলসাঘর (পর্ব ০২)

জলসাঘর (পর্ব ০৩)

জলসাঘর (পর্ব ০৫)

Exit mobile version