Homeগল্পজলসাঘর (পর্ব ০৩)

জলসাঘর (পর্ব ০৩)

জলসাঘর (পর্ব ০৩)

লেখকঃ সাঈদা নাঈম

পল্লবী কুকুরের শব্দ পেয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো। দেখলো বেশ স্বাস্থ্যবান এক লোক ধুতি

আর গামছা গলায় ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে মতির মা। পল্লবীকে দেখেই বলল, “এই যে আম্মা আপনার মালি। অনেকবছর এই কাজ করতাছে। একটা নার্সারিতে কাজ করতো।”

পল্লবী লোকটিকে উদ্দেশ্যে করে বলে, “নার্সারির কাজ ছাড়বে কেন?”

“বৌদিমনি আমার থাকার জায়গা নাই। মতির মা যখন বলল থাকার জায়গা দিবেন তখন আমি খুশি খুশি চলে এলাম। চিন্তা করবেন না। আপনার বাগানে আমি বারোমাস ফুল ফুটিয়ে রাখবো। যে সিজনে যে ফুল। আপনার মন ভালো হয়ে যাবে।”

পল্লবী আর কোনো কথা বলল না। মতির মাকে বলল, ঐ দিকের একটি ঘর খুলে দিতে। মতির মা জানালো চাবি নেই। অনেকদিন তো খোলা হয় না। পল্লবী তালা ভেঙে ফেলতে বলল। মতির মা মাথা নেড়ে চলে গেল; আর পেছন পেছন লোকটি। এমনসময় পল্লবী আবার মতির মাকে ডাকলো, “মতির মা, ওর নামটা তো জানা হলো না।”

উত্তর মালীই দিলো, “আজ্ঞে, আমার নাম রমেশ।”

“আচ্ছা ঠিক আছে যাও।”

মতির মা রমেশকে নিয়ে গিয়ে ঐ ঘরের তালা ভাঙ্গলো। অনেক পুরোনো তালা। বেশ সময় লাগলো।

এই রায় বাড়িতে একটি আস্তাবল আছে। তবে খালি। লোকমুখে শোনা যায় এই আস্তাবলে সাদা চারটি ঘোড়া ছিল। একেবারে টাগড়া ঘোড়া। কখনো কোনো রেসে হারেনি। সর্বাগ্রে জ্বলজ্বল করে জ্বলতো ওদের চোখগুলো। আস্তাবলটি এখন শূন্য পরে আছে।

পল্লবী ঘরের ভেতরটি যতটুকু সম্ভব নিজের মতো করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়েছে। সংস্কার করিয়েছে। পুরো বাড়ি সংস্কার করার মতো সামর্থ আপাতত মুকুন্দের নেই। কিছু পুরোনো ছবি পল্লবী খুঁজে পেয়েছিল। এগুলো পরিস্কার করে দেয়ালে টানিয়েছে। এতবড় হলঘর, এ ছবিগুলো ছাড়া যেন মানাচ্ছিল না। আর ছিল একটি ফরাসঘর। সিঁড়ির পাশেই ছিল ঘরটি। ওখানে থাকতো জাজিম, তোষক, লেপ, শতরঞ্জি। এখন আর নেই। হয় লুটপাট হয়েছে; নয় সব পাঁচে গেছে। এগুলো জেনেছে পল্লবী ওর স্বামীর কাছ থেকে। মুকুন্দ শুনেছিল ওর ঠাকুরদার কাছ থেকে।

এমনসময় অনেকগুলো পায়রার দল উড়ে গেল। পল্লবী আকাশের দিকে তাকিয়ে পায়রার

উড়ে যাওয়া দেখলো। চঞ্চলা মন ওর, সারাক্ষণ পায়রার মতোই ঘুরে বেড়ায়, কোনো ভয় নেই। অনেক আমোদিত।

দুপুরে খাওয়ার পর সইদের সাথে জম্পেস আড্ডা দেয়। মাঝেমাঝে পানও খায়। ওদের কাছ

থেকে গ্রামের অনেক গল্প শোনে। এ জমিদার বাড়ির কথা শোনে। হঠাৎ লীলা বৌদির কাছ থেকে শুনলো নতুন কথা, “হ্যাঁরে পল্লবী এতোদিন হলো এখানে এসেছিস তোর চোখে কিছু পরেনি?”

পল্লবী ভাবলো বলবে ঐ রাতের ঘটনা। কিন্তু চেপে গেল। ও কি বলে আগে শোনা যাক। তাই বলল, “কি? আমিতো কিছু দেখিনি।”

“সে কিরে! যে বলাবলি করে এ বাড়িতে আত্মা ঘুরে বেড়ায়। বিশেষ বিশেষ দিনে ঐ দক্ষিণের জলসাঘরের বাতি জ্বলে ওঠে!

“কি যে বলিস, এতদিনে তাহলে আমার চোখে পরতো না? আর শোন এসব আত্মাটাত্মা বলে কিছু নেই। মরে গেলে সবাই ভগবানের কাছে চলে যায়।”

লীলা তখন বলল, “সেইটিই তো বলছি। মরে গেলে যায় ভগবানের ঘরে। যার কথা শোনা যায় সে তো মরেনি গো। শুনেছি ঐ জলসাঘরে কোনো এক ঝড়ের রাতে এক নাচনেওয়ালী আটকে গিয়েছিল। এরপর থেকে ওকে কেও এ গাঁয়ে দেখেনিকো।

পল্লবী বলল, “হয়তো ঝড় থামার পর সে চলে গিয়েছিল।”

“না গো না। তুমি একটু সাবধানে থেকো। তোমার কর্তাতো ফেরে অনেক রাতে। মতির মাকে কাছে রেখো। ও জাতে মোসলমান কিন্তু এ বাড়ির অনেক ভক্ত। আর অনেক সাহস আছে বেটির।”

সবাই একসাথে হেসে ওঠে। পল্লবী তখন বলে, “আর যখন আত্মা বের হয়ে আসবে তোদের ডেকে আনবে।”

“হায় ভগবান! এ তো মস্করা করছে। বুঝবি যেদিন, দেখবি।”

“আচ্ছা, আমি বুঝে তোদের বোঝাবো।”

“আজ আমরা যাই সই। সন্ধ্যাবাতির সময় হয়ে এলো।”

সেদিন রাত আটটার মধ্যে মুকুন্দ চলে এলো। বেশ খুশি মনে আছে সে। যে কাজটির জন্য এতদিন ব্যস্ততা ছিল, সেটি সফল হয়েছে। একসাথে বসে দু’জন রাতের খাবার খেল। পল্লবী মুকুন্দকে বলল, “আজ একটা বিশেষ রাত জানো?”

অবাক হলো মুকুন্দ।

“বিশেষ রাত? কি?”

“দেখি বলতে পারো কিনা।” – পল্লবী কিছুটা রহস্য নিয়ে বলল।

“আহা আমার মনে নেই, তুমি বলো। আমি হার মানছি তো।”

পল্লবী হাঁটতে হাঁটতে বারান্দায় এলো, মুকুন্দও পেছন পেছন। পল্লবী আকাশের দিকে

তাকিয়ে বলল, “তাকিয়ে দেখো আজ ভরা জোছনা। চারদিকটা কত সুন্দর দেখাচ্ছে।”

মুকুন্দ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, “সত্যিই তো। চমৎকার!”

পল্লবী তখন আহ্লাদিত সুরে বলল, “চলো না গো ছাদে যাই। আমার অনেকদিনের শখ তোমার পাশে বসে খোলা আকাশের নিচে সারারাত জোছনা দেখবো।”

বাংলা সাহিত্য - www.BrandBangla.org
বাংলা সাহিত্য - www.BrandBangla.orghttps://www.brandbangla.org
আমাদের ওয়েবসাইটটি দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারত, নেপাল, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ বিভিন্ন দেশের মানুষের কাছে যেতে সক্ষম হয়েছে।
RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular