জলসাঘর (পর্ব ০২)
লেখকঃ সাঈদা নাঈম
ভোরের বাতাসের সাথে একটা মিষ্টি গন্ধ ভেসে আসে। পল্লবীর খুব ভালো লাগে। কেমন একটা মাদকতা ছড়ানো সেই গন্ধে। সামনের বাগানে খুব একটা গাছ নেই। পল্লবী ভাবলো একটা মালী রাখবে। বাগানটাকে আবার সজীব করবে। পছন্দের গাছগুলো লাগাবে। যতদিন থাকবে এখানে নিজের মতো করে গুছিয়ে থাকবে। উঠানে একটা তুলসী গাছ লাগাবে। পূজোর ঘরটি খুলে সবার আগে সংস্কার করাবে। বাগানে অবশ্য বেশ পুরোনো বড় বড় বকুল আর চাঁপা গাছ রয়েছে। গন্ধটা চাঁপা ফুলের। জীর্ণভাবে যেন প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে এ গাছ কয়েকটি। পল্লবী গিয়ে বাগানের একটি গাছের কোণে বসে। মনটা ভালো লাগায় পূর্ণ। হঠাৎ গত রাতের কথা মনে পড়ে যায়। ও একটি শব্দ পরিষ্কার শুনতে পেয়েছে। মতির মা কি শুনতে পায়নি?
পল্লবী ঐ ঘরটির দিকে যাওয়ার জন্য উঠেছে এমন সময় মতির মা এসে খবর দিলো মুকুন্দ ঘুম থেকে উঠেছে। ওকে ডাকছে। দো’টানার মধ্য দিয়ে পল্লবী উঠে গেল। তবে চোখ গেল ঐ ঘরটির দিকে।
মুকুন্দ এরমধ্যে স্নান সেরে বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি। সকালের জলখাবার দু’জন একসাথে খায়। অনেকদিনের অভ্যেস।
মুকুন্দ প্রচণ্ড ভালোবাসে পল্লবীকে। এখানে এসে থাকার জন্য বারবার সে অনুতপ্ত হয় পল্লবীর কাছে। স্বামীর মনকে আস্বস্ত করার জন্য পল্লবী বলে যে, ওর এখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বরং ভালো লাগছে। শুনে মুকুন্দ খুশি হয়ে স্ত্রীর কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়ায়। পল্লবী গতরাতের কথা কিছু বলে না। ও খুব সাহসী মেয়ে। যা করার নিজেই করবে। একটা কিছু আছে ও ঘরে। পল্লবীকে ভাবনায় দেখে মুকুন্দ প্রশ্ন করে, “কি হয়েছে? কিছু বলবে?”
“না। তেমন কিছু না। তুমি এখন বের হবে না দেরি হবে? ”
“না, ইন্দ্র এলেই বের হয়ে যাবো। এই এলো বলে। তুমি কি ভাবছো?”
“আমি! কই কিছু না। চা টা খাও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
রায় বংশের বংশধর মুকুন্দ। জমিদারি চলে গেছে কয়েক যুগ আগে। রয়েছে শুধু এ বাড়ি। কাছারির দেউড়ির পার হয়ে ইন্দ্র মুকুন্দকে ডাকতে ডাকতে এলো। মুকুন্দ বের হয়ে গেল। এখন সারাদিন হাতে অনেকসময়। পল্লবী মতির মাকে টেবিল পরিস্কার করতে বলল। আর জানতে চাইলো, “মতির মা একজন মালী পাওয়া যাবে?”
“যাইবো না ক্যান আম্মা। যাইবো।”
“খবর দাওতো। পারলে কিছুক্ষণের মধ্যে দেখা করতে বলো।”
“আম্মা কি বাগান করবেন?”
“করবো কি? করাই আছে। নতুন গাছ এনে লাগাবো। তুমি খবর দাও। শোন, এখানে খাবে থাকবে। মাসে যা পারবো আমি দিবো। এ চুক্তি করেই এনো।”
“ঠিক আছে আম্মা।”
পল্লবী উঠে ছাদের সিঁড়ির দিকে যায়। এটা দেখে মতির মা উচ্চস্বরে বলে ওঠে, “সাবধান আম্মা। সিঁড়িটা ভাঙা আর শ্যাওলায় ভরা। তাছাড়া একা যাইয়েন না।”
“সাবধানে যাবো কিন্তু একা যাবো না কেন?”
“আম্মা আফনেরা শহরের মানুষ, কি দেখতে কি দেইখ্যা ভয় পাইবেন, পুরানা বাড়ি বইলা কইলাম।”
“আচ্ছা যাও। আমি ভয়টয় পাই না। তবে হ্যাঁ, সাবধানে যাবো।”
পল্লবী সিঁড়ি দিয়ে সাবধানে ওঠে, বেশ পুরোনো বলেই ভাঙাচোরা। কিন্তু উপরে উঠেতো অবাক! বেশ পরিচ্ছন্ন। কারো বোঝার উপায় নেই যে এতকাল এ ছাদে কেউ উঠিনি। ছাদটা ঘুরে দেখতে দেখতেই চোখ গেল একটি গাছের দিকে। সামনে গিয়ে দেখে টবে লাগানো একটি তুলসী গাছ। এবং প্রাণবন্ত। প্রতিদিন এতে জল ঢালা হয়। আজও দেয়া হয়েছে। সবটা জল মাটি এখনো শুষে নিতে পারেনি। পল্লবী অবাক হলো! মতির মা তো বলেছিল এখানে কেউ আসে না। তবে এ গাছ!
এরমাঝে পল্লবী আবার সেই ঘরের দিকে তাকালো। কিছু দেখা যায় কিনা এই ভরসায়। কিন্তু না। কিছুই চোখে পড়লো না। কৌতূহল ভরা মন নিয়ে পল্লবী আবারো সাবধানে নিচে নেমে এলো।
মতির মা বাড়িতে নেই। সম্ভবত মালীর সন্ধানে গিয়েছে। এমনসময় ঘেউঘেউ করে কুকুর ডেকে উঠলো। নিশ্চয়ই কারো অস্তিত্ব টের পেয়েছে।
সকল পর্বের লিংক নিম্ন দেওয়া হয়েছে
====================