জলসাঘর (পর্ব ০১)
লেখকঃ সাঈদা নাঈম
পল্লবীর স্বামীর হঠাৎ ব্যাবসায় বিশাল লোকসান হয়। পরিস্তিতি এমন যে ঢাকা শহরে জীবনযাপন করা প্রায়ই অসম্ভব। গতান্তর না দেখে মুকুন্দ সিদ্ধান্ত নেয় কিছুদিনের জন্য হলেও গ্রামে পৈতৃক ভিটায় গিয়ে থাকবে। পল্লবীর কিছুতেই ঐ পুরোনো বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে নেই। আবার না গিয়েও উপায় নেই। তাই স্বামীর কথা মেনে নিল।
পুরোনো জমিদার বাড়ি। জমিদারি না থাকলেও বাড়িটি আছে, জীর্ণ অবস্থায়। কিছু মেরামতের কাজ সেরে নিলে থাকার উপযোগী হবে। মেনে নিলো পল্লবী। খানসামা নেই, গালিচা নেই, ঝাড়বাতি নেই। শুধু আছে ঘরগুলো। আলিশান ঘর। ইয়া বড় বড়। সবগুলো ঘরে তালা লাগানো, কত বছর যে এ ঘরগুলো খোলা হয় না তা কে জানে! এ ঘরগুলো দেখে পল্লবীর গায়ে কেমন যেন শিহরণ জাগে। বিশেষ করে দক্ষিণ দিকের একটি ঘরের দিকে গেলে কেমন যেন অনুভূতি জাগে।
জমিদার বাড়ির বংশধর বলে কাজের লোকের অভাব হয়নি পল্লবীর। যেমনটা একাকিত্বে কাটবে ভেবেছিল, তেমনটি কাটাতে হলো না। অনেকেরই আনাগোনা এখানে। মুকুন্দ নতুন ব্যবসা শুরু করবে এ নিয়ে প্রায় সন্ধ্যায় আলোচনা হয় সমবয়সীদের সাথে। এখানে পল্লবী চোখ জুড়িয়ে জোছনা দেখতে পারে। গুনগুনিয়ে গান গায় আর রান্না করে। ইতোমধ্যেই সই হয়েছে কয়েকজন।
রাতের আকাশের কোনে শুকতারা জ্বলজ্বল করে জ্বলে ওঠে। তারাদের সাথে পাল্লা দিয়ে আগের মতো জমিদার বাড়ির আলো ঝলমল করে না। এত জৌলুস এখন আর নেই। মুকুন্দেরও সে ক্ষমতা নেই। অকম্পিত ভাবে কয়েকটি বাতি জ্বালিয়ে রাখে।
এমনি এক তারা ভরা রাতে পল্লবী দক্ষিণ দিকের ঘরটির সামনে দিয়ে যাচ্ছিল, সাথে অবশ্য একজন পরিচারিকা ছিল। হঠাৎ যেন শুনতে পেল একটা শব্দ ঘরটির ভেতর থেকে আসছে। জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালার সময় যে শব্দ হয় তেমন। পরিচারিকাকে বললো, “মতির মা শুনতে পাচ্ছো? ভেতরে কি যেন একটা শব্দ, পানির।”
মতির মা বেশ সাহসী মহিলা। এ কালের সবাই জানে। সে বলল, “কই শব্দ আম্মা! মনে হয় বৃষ্টি হইবো।”
“এমন রাতে বৃষ্টি! কি যে বলো তুমি? আমি শুনলাম।”
“আপনার মনের ভুল আম্মা। চলেন ঘরে যাই। আব্বার আইতে রাইত হইবো। হেই পর্যন্ত আমি থাকমু।”
পল্লবীর মন কিছুতেই মানতে চাচ্ছে না যে ও ভুল শুনেছে। কারো অস্তিত্ব ও টের পেয়েছে!
সকল পর্বের লিংক নিম্ন দেওয়া হয়েছে
====================