Home গল্প ভালবাসা রং পালটায় না (পর্ব ০৩)

ভালবাসা রং পালটায় না (পর্ব ০৩)

ভালবাসা রং পালটায় না (পর্ব ০৩)

লেখকঃ তানিয়া আবেদিন

দুর্দান্ত প্রতাপে ঝড় বয়ে যাওয়ার সাথে চারপাশটা প্রায় লন্ডভন্ড হবার দশা। তারচেয়ে ভয়ঙ্কর অবস্থা বিরাজমান এই দুই কিশোর কিশোরীর মনে। কিশোরের মনে অজস্র প্রশ্ন ঘুরপাক করছে আর কিশোরী? কিশোরীর মন কেমন করা সব অনুভূতি হচ্ছে।

কি যে ছিল সেই কিশোরের চাহনীতে, কিশোরীকে সম্মোহনী শক্তিতে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। ঝড় থেমে এলে তানজীদ চলে যায় কিন্তু রুমকি কি যেন এক ঘোরের মধ্যে রয়ে গেল। এই ঘোর কি আজীবন আচ্ছন্ন করে রাখবে রুমকিকে? রুমকি বুঝতে পারে না। কিন্তু নিজের মাঝে ভয়ঙ্কর রকমের একটা পরিবর্তন টের পায়।

যে মানুষটাকে সে একসময় সহ্য করতে করতে পারত না আজ উঠতে বসতে সারাদিন তার কথা মনে পরে। মনে পরে বললে আসলে ভুল হবে রুমকি মাথা থেকে সেদিনের সেই ঘটনা সরাতে পারছে না কোনভাবে। সেই সাথে নতুন উপদ্রব হিসেবে হানা দেয় পূর্বের স্মৃতিগুলো।

কিন্তু এসময়ে এমন কেন হলো। তানজীদরা তো চলে যাচ্ছে। স্কুলে আসা যাওয়ার পথে, ব্যস্ত মাঠে কিংবা বিকেলে হাঁটার সময় খুব সন্তপর্নে রুমকির চোখ জোড়া কেবল তানজীদকেই খুঁজে বেড়ায়। কিন্তু জগতের কিছু অদ্ভুত নিয়ম আছে। যখন প্রচন্ড ভালোবাসা নিয়ে তানজীদ আশেপাশে ঘুরত রুমকির মনটা বিষিয়ে থাকত। আর আজ? এতো করে যাকে এক নজর দেখার জন্য মনের ভেতরটা আকুপাকু করছে তার দেখা মিলছে। সে যেন বাতাসে হারিয়ে গিয়েছে।

কয়েকদিন পর তানজীদের বাবা মা এলেন বাসায় দেখা করার জন্য। আর তিনদিন পর চলে যাচ্ছেন উনারা। এদিকে তানজিদের না কোন খবর আছে না দেখা। রুমকির ভীষণ খারাপ লাগতে থাকে।

সেদিনের পর তানজীদ ঠিক করে আর কোনভাবেই সে রুমকির মুখোমুখি হবে না। আড়াল থেকেই রুমকিকে দেখতে থাকে স্কুলে আসা যাওয়ার সময় কিংবা বিকেলে হাঁটাহাঁটি করার সময়। এমনকি কোয়ার্টারের সবাই মিলে যখন তাদের ফেয়ারওয়েল পার্টির আয়োজন করেছিল তখনও ইচ্ছে করে রুমকির সামনে আসেনি। দূর হতেই রুমকিকে দেখছিল।

নতুন জায়গা নতুন মানুষজনের মাঝে একটা কিশোরের পূর্বের স্মৃতি ধীরে ধীরে ভুলে যাবার কথা। কিন্তু তানজীদ কোনভাবেই যেন সেসব স্মৃতি মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনি। সে যে চেষ্টা করেনি এমনটা কিন্তু নয়। কিন্তু পারেনি।

আর ঐদিকে রুমকির অবস্থা আরও করুন। কথায় আছে না মানুষ দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বুঝেনা এক্ষেত্রে ঠিক তাই। তানজীদরা চলে যাবার পর রুমকি যে খুব ভালো ছিল এমনটা নয়। সারাক্ষণ তাকে তাড়া করে বৃষ্টির জলে ভেজা এক কিশোরের করুন অথচ খুব তীব্র এক চাহনি। আকুতি ভরা সেই চাহনি যেন ঘুমের মাঝেও তাড়া করে বেড়ায় রুমকিকে।

ব্যস্ত নগরীর, ব্যস্ত সড়কের, কোনো এক ব্যস্ত রেস্তোরাঁয় একঝাঁক উচ্ছল তরুন তরুনীর মিলন মেলা বসেছে। একপক্ষ এসেছে তাদের বন্ধুর জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষে আর অপরপক্ষ তাদের বন্ধুর পরীক্ষায় ভালো ফলাফল উদযাপন উপলক্ষে।

আট বছর অনেক লম্বা একটা সময়। এই সময়ের ব্যবধানে কিশোর হয়ে যায় তরুণ আর কিশোরী আজকের দিনের সেই তরুণী। কিন্তু তরুণটি? সে কোথায়? সে এখনো এসে পৌঁছায়নি আজকের সেই রেস্তোয়ার। কারন তার বন্ধুর জন্মদিন আর কেক আনার দায়িত্ব পরেছে তার কাঁধে। লম্বা ট্রাফিক ঠেলে কেক নিয়ে পৌঁছাতে তার দেরী হয়ে গেছে। বন্ধুরা ততক্ষনে এসে পৌঁছে গেছে। বারবার কল করে যাচ্ছে তাকে। এমনিতেই দেরী হওয়ার কারনে অস্থির তানজীদ তার উপর একের পর এক কল করেই যাচ্ছে বন্ধুরা। এমন অবস্থায় ঘটল এক অঘটন।

রুমকির অনার্স ফাইনালের রেজাল্ট দিয়েছে। সর্বোচ্চ সিজিপিএ তার। যার ফলে বন্ধুদের সবার আবদার রাখতেই তাদের আজকের এই আয়োজন। ওদের আড্ডা প্রায় শেষ বের হয়ে যাওয়ার আগ মুহুর্তে রুমকি ওয়াশ রুমের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। একটু আনমনা থাকায় লক্ষ্য করেনি হঠাৎ কি যেন এসে ওর গায়ের উপর পরল। কিছুক্ষণের জন্য যেন কোন সেন্স কাজ করছিল না রুমকির।

খবর যখন হলো তখন গায়ে নরম কিছু লেগে থাকার অনুভূতি হচ্ছিল। ভালো করে তাকাতেই দেখে ইয়া বড় একটা কেকের পুরোটাই তার গায়ে। সাথে সাথে তার রাগ হলো ভীষণ। পুরো নিউমার্কেট ঘুরে এই বটল গ্রীন কালারের জামদানীটা কিনেছিল। টেইলারের দোকানে কারো ফলস লাগাতে দেয়া সবুজ জামদানীতে চোখ আটকে গিয়েছিল তার। মা বলেছিলেন সামনে ছোটন মামার হলুদে এমন একটা জামদানী কিনে দিবেন।

কিন্তু ছোটন মামার হলুদে সবাই একই রকম শাড়ি পরায় রুমকির আর শাড়িটা পরা হয়নি। তাই আজ খুব শখ করে শাড়িটা পরেছিল। মা অবশ্য বারবার নিষেধ করছিলেন শাড়ি পরতে। এখন ভীষণ আফসোস হচ্ছে। রুমকির মা সবসময় জামদানি শাড়িকে মহারানীর শাড়ি বলেন। কারন এই শাড়ির সবসময় স্পেশাল কেয়ার লাগে। অথচ এই জামদানী শাড়িই রুমকির ভীষণ পছন্দ।

এতো শখের শাড়ী! তার উপর এই রঙয়ের জামদানী তেমন পাওয়াও যায় না। সব মিলিয়ে রুমকির ভীষণ মন খারাপ হলো। এই ভাবনা থেকে সম্বিত ফিরে পেল সামনের ব্যক্তির “সরি” বলায়। কিন্তু এখানেও বাঁধল বিপত্তি। মানুষটার দিকে তাকাতেই যেন বড়সড় একটা ধাক্কা খেল। এই চোখ জোড়া তো সেই চোখ, যা তাকে এতগুলো বছর তাড়া করে আসছে।

তানজীদের অবস্থা পাগলপ্রায়। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে কার সাথে যেন ধাক্কা লেগে পুরো কেকটা গিয়ে পরল সামনের মানুষটার গায়ে। সরি বলে তাকাতেই একেবারে জমে গেল। সেই মানুষটা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, এতগুলো বছর যার অপেক্ষায় ছিল।

সেই মুহূর্তে আর কি বলবে বা বলা উচিৎ তার মাথায় আসছে না। রুমকির চোখে চোখ পরতেই বুঝতে পারল রুমকি তাকে চিনতে পেরেছে। কি করবে বুঝতে পারছিলা না এমন সময় রুমকিই বলল “তানজীদ”। একটুখানি সংশয় যেন ছিল রুমকির কন্ঠে। তানজীদ ভীষন অবাক হয় রুমকি ওকে কি করে চিনতে পেরেছে এই ভেবে। ওর নাকি চেহারায় অনেক পরিবর্তন এসেছে। তারুন্যে এসে কৈশোরের কোনো কিছু নেই চেহারায়। একেবারে ভেঙ্গেচুরে নাকি অন্য এক তানজীদ হয়ে গিয়েছে, এমনটা তার আত্মীয়স্বজন সবাই বলে। তাহলে এতো বছর পর রুমকি তাকে চিনল কি করে?

সকল পর্বের লিংক নিম্ন দেওয়া হয়েছে
====================

ভালবাসা রং পালটায় না (পর্ব ০১)

ভালবাসা রং পালটায় না (পর্ব ০২)

ভালবাসা রং পালটায় না (পর্ব ০৪)

ভালবাসা রং পালটায় না (পর্ব ০৫)

ভালবাসা রং পালটায় না (পর্ব ০৬)

Exit mobile version